বাংলাদেশে শিশুদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির কভারেজে সামান্য কমতি দেখা যাওয়ায় পরেও সম্প্রতি পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, যেসব শিশু এখনও টিকার বাইরে আছে, তাদের খুঁজে বের করে টিকাদানের আওতায় আনতে হবে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিআইআরডিএপি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় সরকারের প্রতিনিধি, ইউনিসেফ এবং স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। “শক্তিশালী টিকাদান কর্মসূচি এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা” শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে Health Security Foundation ও UNICEF Bangladesh।

Gavi Civil Society Organisations-এর চেয়ার ও Health Security Foundation-এর নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ ২০২৩ সালের Coverage Evaluation Survey-এর তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশের টিকাদান কভারেজ ৮১.৬০ শতাংশ, যেখানে ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৮৩.৯০ শতাংশ। সামান্য এই পতনকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে, কারণ BCG, DPT ও Pentavalent-এর মতো টিকা আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি জানান, ১৯৭৯ সালে Expanded Programme on Immunisation (EPI) চালুর পর থেকে বাংলাদেশ টিকাদানে অনেক অগ্রগতি করেছে। প্রতিবছর লাখ লাখ শিশু যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটানাস, হেপাটাইটিস বি ও Haemophilus influenzae type b-এর মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে।

আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘zero-dose’ এবং ‘under-immunised’ শিশুদের খুঁজে বের করা এখন সবচেয়ে জরুরি। ডা. আহমেদ শহরাঞ্চলে বিশেষ পরিকল্পনা, দুর্গম এলাকায় আরও দক্ষ টিকাদান পদ্ধতি এবং এনজিও ও প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ডিজিটাল টুল” ব্যবহার করে শিশুরা কখন কোন টিকা পেয়েছে, তা ট্র্যাক করা এবং ‘missed dose’ কমানো সম্ভব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এটিএম সাইফুল ইসলাম বলেন, “একজন শিশুও যেন টিকার বাইরে না থাকে। একটি সুস্থ ও টিকাপ্রাপ্ত শিশু মানেই একটি শক্তিশালী ও উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি।”

ইউনিসেফ-এর Health Manager ডা. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, “প্রতিটি টিকায় বিনিয়োগের বিপরীতে আমরা প্রায় $২৫.২ ডলার রিটার্ন পাই। প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ অসুস্থতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে EPI-এর মাধ্যমে।” তিনি বলেন, ১২ শতাংশ টিকা এখনো ‘invalid dose’, অর্থাৎ শিশুর নির্ধারিত বয়সের আগেই দেওয়া হচ্ছে। “এই সমস্যাটা শুধরে নিতে পারলে টিকাদান কর্মসূচির কার্যকারিতা ৯০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।”

DGHS-এর ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফী বলেন, শিশুদের নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট টিকা দেওয়ার জন্য “ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম” অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একসাথে পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চালিয়ে বাংলাদেশ আবারও টিকাদান ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারবে। এখন মূল লক্ষ্য একটাই—দেশের প্রতিটি শিশুকে, দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে হবে জীবনরক্ষাকারী টিকা।

সূত্র:
চার বছরে টিকাদান কমেছে ২ শতাংশের বেশি, ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের [Internet]. medivoicebd.com. ২০২৫ [উদ্ধৃত ২৩ এপ্রিল ২০২৫]; পাওয়া যাবে: https://medivoicebd.com/article/32080

Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.