বাংলাদেশে শিশুদের জীবন রক্ষাকারী টিকা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যারা কখনো টিকা নেয়নি (জিরো-ডোজ) এবং যারা অসম্পূর্ণ টিকা পেয়েছে (আন্ডার-ইমিউনাইজড), তাদের জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। এই সমস্যা সমাধানে “কান্ট্রি লার্নিং হাব-বাংলাদেশ” (সিএলএইচ-বাংলাদেশ) নির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দুর্গম অঞ্চল এবং নগরীর বস্তিতে থাকা শিশুদের টিকাদানের আওতায় আনা।

ই-ট্র্যাকার: শিশুদের টিকাদান পর্যবেক্ষণের প্রযুক্তি
সিএলএইচ-বাংলাদেশ একটি নতুন ডিজিটাল টুল চালু করেছে, যার নাম ই-ট্র্যাকার। এই পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহার করে শিশুদের টিকাদান রেকর্ড করেন। এর ফলে, জিরো-ডোজ এবং আন্ডার-ইমিউনাইজড শিশুদের চিহ্নিত করা সহজ হয়। টিকাদান কার্যক্রমে ঝরে পড়া শিশুদের সংখ্যা কমাতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

ই-মেসেজিং: টিকাদানের সময় মনে করিয়ে দেওয়া
এই উদ্যোগে মা-বাবাদের মোবাইলে সময়মতো টিকাদানের বার্তা পাঠানো হয়। এতে তারা নির্ধারিত সময়ে টিকাদান কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হন। সহজ এই পদ্ধতিটি টিকার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ই-মনিটরিং: বাস্তব সময়ের তথ্য পর্যবেক্ষণ
সিএলএইচ-বাংলাদেশ ই-মনিটরিং নামের একটি ওয়েব-ভিত্তিক পদ্ধতি চালু করেছে। এর মাধ্যমে জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। কোন শিশু টিকা পেয়েছে এবং কারা পায়নি, তা এই প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়।

স্থানীয় সম্পৃক্ততা: সচেতনতা বৃদ্ধিতে নেতাদের ভূমিকা
সিএলএইচ-বাংলাদেশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা এবং সমাজকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করে। এসব সভায় টিকার গুরুত্ব এবং জিরো-ডোজ শিশুদের অবস্থা তুলে ধরা হয়। নেতাদের উৎসাহিত করা হয় অভিভাবকদের টিকাদানে উদ্বুদ্ধ করতে।

পরিবর্তিত সময়সূচি এবং এনজিওর ভূমিকা
শহরের কর্মজীবী মায়েদের কথা বিবেচনা করে সন্ধ্যা বেলায় টিকাদান সেশন চালু করা হয়েছে। এছাড়া, দুর্গম অঞ্চলে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে টিকাদানের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো হয়েছে। এনজিও কর্মীরাও মাঠপর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রমে সহায়তা করছেন।

কমিউনিটি মিটিং এবং সচেতনতামূলক যোগাযোগ
ইয়ার্ড মিটিং এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতার মাধ্যমে টিকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন উপকরণ।

সিএলএইচ-বাংলাদেশের এসব উদ্যোগ প্রযুক্তি, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা এবং সেবা প্রদান পদ্ধতির মিশ্রণে তৈরি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক হয়ে উঠছে।

Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.