গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, সম্প্রতি ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) এর প্রতি সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা বর্তমান সহযোগিতার মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংসদ সদস্যরা গ্যাভি’র টিকাকরণ সহায়তার তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। “টিকাদান কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং গ্যাভি’র মধ্যে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।“
“স্বাস্থ্যই সম্পদ” প্রবাদটি বাংলাদেশের জন্য সত্য। স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য সংসদীয় ফোরামের সদস্যরা ভাল করেই জানেন যে জনগণের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিন অপরিহার্য। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে [১]। টিকাদান পরিষেবায় বিনিয়োগের সুদূরপ্রসারী ফল রয়েছে, কারণ বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে টিকাদানে ব্যয় করা প্রতি ১ ডলারের বিপরীতে ২৬ ডলারের সমান সুবিধা পাওয়া যায় [2]। গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ইপিআই-এর অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ও টিকা দেওয়ার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০০১ সালে শুরু হওয়া বাংলাদেশ এবং গাভির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা বাংলাদেশের টিকাদান কার্যক্রমের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করেছে এবং টিকাদান কভারেজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছে।
গ্যাভি শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা দিয়েই নয়, বরং কোচিং, প্রযুক্তিগত সহায়তা, একটি সমন্বিত ডিজিটাল স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য সহায়তা প্রদান করেছে। বাংলাদেশে টিকাদানের বিষয়ে গ্যাভি’র কার্যক্রম ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, বিশ্বব্যাংক এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাভি’র অংশীদারিত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন, যা বাংলাদেশকে হাম, পোলিও এবং নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সময়ের সাথে সাথে নতুন টিকা প্রচলনসহ নিয়মিত টিকাদানের বিস্তারকে প্রসারিত করতে সক্ষম করেছে, যার অর্থায়নে ছিল মূলত গ্যাভি। [3]
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশে এইচপিভি ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক প্রবর্তনও একটি অর্জন, যা প্রধানমন্ত্রীর মতে গ্যাভি’র সাথে অংশীদারিত্বের সফলতাকেই তুলে ধরে। জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের মূল অবদান হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা উন্নত করা এবং এর কর্মকাণ্ডের জন্য জনশক্তি প্রদানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। গ্যাভি একটি উদ্ভাবনী ব্যয়-সংস্থান পদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে স্ব-অর্থায়নের দিকে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপকে সমর্থন করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ADB) সহযোগীতায় অতিরিক্ত ভ্যাকসিন কিনতে পারে।
সংসদ সদস্যরা গ্যাভি প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাতের সময় তাদের সহযোগিতার সম্প্রসারণের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশস্তির কথাই তুলে ধরেন। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম রুহল হক এমপি বলেন, “টিকাদান কর্মসূচীতে আমাদের বেশ কিছু বাধা আছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ইপিআই কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। বাংলাদেশ টিকাদানে একটি সক্রিয় দেশ। আমি ২০৩০ পর্যন্ত তহবিল চালিয়ে যাওয়ার জন্য গ্যাভি’কে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
গ্যাভি’র অংশীদারিত্বের সম্প্রসারণের ফলে স্ব-অর্থায়নের দিকে ক্রমশ উন্নীত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অতিরিক্ত সময় দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় আরও উদ্ভাবনের দ্বার উন্মুক্ত করবে, কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য স্থানীয় ওষুধ শিল্পকে সমর্থন করবে এবং দুর্গম জনগোষ্ঠীর কাছে টিকা পৌঁছানোর জন্য নতুন টিকাদানের কৌশলকে বিকশিত করবে। [৪] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, “আমরা টিকাদানের নতুন উদ্ভাবনে গ্যাভি’র সাথে অংশীদারিত্ব জোরদার করতে প্রস্তুত আছি”।
তথ্যসূত্র: