মাহমুদা খানম, প্যারামেডিক এবং ভ্যাক্সিনেটর হিসেবে যার আছে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা

উত্তর ঢাকার UTPS NGO ক্লিনিকটি মাহমুদার জন্য অনেকটা বাড়ির মতোই। সরকারী পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসাবে বহু বছর কাজ করার পর, কিছুদিন একজন সার্ভিস প্রোমোটর এবং বর্তমানে একজন প্যারামেডিক হিসাবে তিনি ক্লিনিকের সহকর্মী এবং দর্শনার্থীদের অনেককেই চেনেন। বিশেষ করে যেসকল মায়েদের নিয়মিত টিকা দেওয়ার জন্য তাদের নবজাতকের নিয়ে প্রায়ই ক্লিনিকে আসতে হয়, তাদের নিকট মাহমুদা একটি অতি পরিচিত মুখ। 

এনজিও ক্লিনিক সপ্তাহে পাঁচ দিন সমস্ত রুটিন ভ্যাকসিন সরবরাহ করে, যেমনঃ বিসিজি, পেন্টা, পিসিভি, ওপিভি, এমআর। মাহমুদা ভ্যাকসিনের সময়সূচী সম্পর্কে এবং শৈশবকালীন বিভিন্ন রোগের জন্য ভ্যাকসিনগুলি যে সুরক্ষা প্রদান করে তা নিয়ে সম্পূর্ণ অবগত আছেন। তিনি যেই ক্লিনিকে কাজ করেন সেটি স্থানীয় এনজিও ‘ইউনিটি থ্রু পপুলেশন সার্ভিস (ইউটিপিএস)’ দ্বারা পরিচালিত, যা টিকাদান পরিষেবা প্রদানকারী হিসাবে সরকারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বর্তমানে একজন প্যারামেডিক হিসেবে মাহমুদা টিকাদান প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছেন। সচেতনতা বাড়ানো এবং পর্যবেক্ষণ করা তার কাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি ছয় সপ্তাহ পরে ক্লিনিকে সমস্ত নবজাতকের পিতামাতার সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের শিশুদের পেন্টাভ্যালেন্টের প্রথম ডোজ নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। এই সময় তাদেরকে টিকা দেওয়ার কার্ডটি সাথে আনতে হয়, যা তাদেরকে নবজাতকের বিসিজি শট নেওয়ার পরপরেই প্রদান করা হয়। 

প্রতি সপ্তাহে মাহমুদা কয়েকটা ‘বঞ্চিত’ শিশুদের মুখোমুখি হন। তাদের কেউ কেউ শূন্য-ডোজের শিশু যারা পেন্টার একটি ডোজও পাননি, বা অন্যথায় টিকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। মাহমুদা যেসব জিরো-ডোজ শিশুকে শনাক্ত করেছেন তাদের অধিকাংশই আশেপাশের বস্তির বাসিন্দা। তাদের পিতামাতারা টিকাদানের সুবিধা সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা সময়সূচীতে যথাযথ মনোযোগ দেন না, বা তারিখের হিসাব হারিয়ে ফেলেন। কিছু পরিবার শুধুমাত্র সন্তান প্রসবের জন্য উত্তরা ক্লিনিকে যান, কিন্তু তারা থাকেন টঙ্গী, গাজীপুর বা আরও অনেক দূরে। তারা তাদের শিশুকে জন্মের পর উত্তরাতে বিসিজি টিকা দিলেও পরবর্তী টিকাগুলোর জন্য বাড়ির কাছের টিকা কেন্দ্রেই শিশুকে নিয়ে যান। তাই মাহমুদাকে প্রতিনিয়ত চেক করে দেখতে হয় যে শিশুরা সত্যিই তাদের টিকা ইউটিপিএস ক্লিনিকে বা অন্য কোথাও পেয়েছে কিনা। এটি করার চেয়ে বলা সহজ, কারণ অনেক দরিদ্র পিতামাতার কাছে মোবাইল ফোন নেই এবং বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের বাড়িতে যোগাযোগ করতে হয়, যাতে সময়ও অনেক লাগে।

শিশুদের মা-বাবা’রা মাহমুদার কাছে যোগাযোগের একাধিক প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। প্রান্তিক শ্রমিকরা প্রায়সই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যান এবং তাদের শিশুদের টিকা কার্ডও সহজেই হারিয়ে যায়। মাহমুদা জানে শুধু বাবা-মায়েদের দোষ নেই। প্রাইভেট ক্লিনিক সবসময় জন্মসনদ এবং টিকা কার্ড প্রদান করে না; তারাও অভিভাবকদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত করে না। আবার কলকারখানার কর্মীরা প্রায়ই কর্মদিবসে ভ্যাকসিন সেন্টারে যাওয়ার জন্য ছুটি পেতে অসুবিধায় পড়েন।

UTPS ক্লিনিক অভিভাবকদের কাছে টিকার বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে৷ অতি সম্প্রতি এই ক্লিনিকে সপ্তাহে দুবার সন্ধ্যায় টিকাদানের সেশন শুরু হয়েছে। যদিও অতি স্বল্প কিন্তু ক্লিনিক শুধুমাত্র ৫০ টাকা বা ০.৫০ ডলার সেন্টের সামান্য ফি নিলেও অনেক দরিদ্র পরিবারের জন্য ভ্যাকসিনেশন সার্ভিস চার্জ একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মাহমুদা মাঝে মাঝে টাকা নেন না।

মাহমুদা তার দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে পালন করেন। তিনি UTPS ক্লিনিকের পাশাপাশি উত্তরা এলাকার আরও দুটি ক্লিনিকে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন, এবং তার মতে নতুন মায়েদের সাথে টিকাদান কর্মীদের সখ্যতা গড়ে তুলতে পারলে তারাই ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য নতুন মায়েদের কাছে টিকার তথ্য পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।  

শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই সাইটটি স্প্যাম কমাতে Akismet ব্যবহার করে। আপনার মন্তব্য কীভাবে প্রক্রিয়া করা হয় তা জানুন