ইপিআই- এর কভারেজ ইভালুয়েশন সার্ভে (সিইএস) ২০১৯ অনুসারে, বাংলাদেশে ৯৫% এরও বেশি শহুরে ও গ্রামীণ শিশু টিকা পায় [1]। এমন একটি অভাবনীয় সাফল্যের পরেও, শূন্য-ডোজ শিশু বা পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনের একটি ডোজও গ্রহণ করেনি এমন শিশুরা গ্রাম ও শহর উভয় পরিস্থিতিতেই বিদ্যমান। এই নিবন্ধটির মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ, শিশুদের টিকা না পাওয়ার কারণ চিহ্নিতকরণ, বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক কারণগুলি বিশ্লেষণ এবং অংশীদার ও নীতিনির্ধারকদের কাছে কার্যকর সমাধানের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।

Cata-Preta et al (2021) ৯২টি দেশে ইমিউনাইজেশন প্যাটার্ন এবং শূন্য-ডোজ শিশুদের পরিস্থিতি অনুসন্ধান করেছে। তাদের গবেষণা সমীক্ষা অনুসারে, ৯২টি দেশের ৭.৭% শিশু শূন্য-ডোজ জনসংখ্যার মধ্যে ছিল। তাদের গবেষণায় প্রথম ডোজ প্রাপ্ত এবং সমস্ত ডোজ প্রাপ্তদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ৭৬.৮% শিশু যারা প্রথম টিকা পেয়েছে তারা সব ধরনের ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছে। তাদের বিশ্লেষণ অনুসারে, গ্রামে শূন্য-ডোজের হার ছিল ৯.০%  এবং যা শহরে ৫.২% [2]। গবেষণায় আরো বলা হয়েছে যে, প্রথম ডোজ টিকাপ্রাপ্ত শিশুদের সবগুলো টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শিশুদের মধ্যে শূন্য ডোজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে [3]। ভারতীয় গবেষকদের অনুসন্ধানে শিশুদের শূন্য-ডোজ হওয়ার পিছনে আরও দুটি কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে – একটি হচ্ছে শিশুদের মায়েদের ১০ বছরের কম স্কুলে পড়া এবং অপরটি হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিবারে বসবাস করা [4]। ভারতের আরেকদল গবেষক দাবি করেছেন যে যেকোন দুর্যোগ বা মহামারী বৈশ্বিক টিকাদানের অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে [৫]। 

এই তুলনামূলক গবেষণাটি বিশ্বজুড়ে শূন্য ডোজের অস্তিত্বের পিছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সাথে প্রাসঙ্গিক ও অন্তর্নিহিত কারণগুলি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা। গবেষণা অনুযায়ী আয়ের স্তর এবং শিক্ষার হার – এই দুটি কারণ যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক হতে পারে। যদিও বাংলাদেশে ইপিআই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তবে বেশিরভাগ এনজিও যারা শহরে ভ্যাকসিন সরবরাহ করে তারা পরিষেবা চার্জ নিয়ে থাকে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক সঙ্গতির সাথে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ। অধিকন্তু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিয়মিতভাবে টিকাদান কর্মসূচি এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করাও জরুরী। 

এটা স্পষ্ট যে ‘শূণ্য ডোজ’ সমস্যাটির সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিস (NCIP)-এর মাধ্যমে টিকাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সেবাদানকারীদের শিক্ষিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারে। বেসরকারি খাতেরও টিকাদান কভারেজ উন্নত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করা উচিত। 

শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই সাইটটি স্প্যাম কমাতে Akismet ব্যবহার করে। আপনার মন্তব্য কীভাবে প্রক্রিয়া করা হয় তা জানুন