শিশুদের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিনের বর্তমান অবস্থা
শিশুদের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিনের বর্তমান অবস্থা

১৯৮৫ সালে, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী যখন শুরু হয় তখন এক বছরের কম বয়সী মাত্র ২ শতাংশ শিশু টিকা-সেবার আওতায় ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারী এবং বেসরকারী খাতে একইভাবে সকল ধরণের টিকাসমূহ প্রদান করা হয়। ৮১ শতাংশ সাফল্যের হার থাকা সত্ত্বেও, এখনও মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী সুবিধার আওতার বাইরে অবস্থান করছে। এর পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব। 

সমীক্ষায় দেখা যায় যে ১৯ শতাংশ টিকা বঞ্চিতদের মধ্যে অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। প্রচার প্রচারণা ও সচেতনতার অভাবের কারণে বিনামূল্যে পাওয়া যায় এমন অনেক ধরনের টিকাও জনগণের অজানাই রয়ে গেছে। তবে সঠিক সময়ে টিকা নিলে শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রোধ করা যায় বা তারা পরবর্তীতে আক্রান্ত হলেও এর তীব্রতা কমানো সম্ভব হয়। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। 

শিশুদের জন্য টিকাগুলির মধ্যে যক্ষ্মার বিসিজি টিকা জন্মের পরপরই দিতে হয়। এরপর ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ এবং ১৮ সপ্তাহ পরে পেন্টাভ্যালেন্ট-এর ৩টি ডোজ দিতে হবে। হাম ও রুবেলার প্রথম ডোজ ৯ মাস পূর্ণ হলে এবং দ্বিতীয় ডোজ ১৫ মাস পূর্ণ হলে দিতে হবে। জন্মের পর থেকে ১৫ মাস পর্যন্ত শিশুকে অন্তত পাঁচবার টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে টিকাদান সংক্রান্ত সম্প্রসারিত কর্মসূচি (ইপিআই) শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল। তারপরে ১৯৮৫ সালের জরিপে দেখা গেছে যে ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছিল। তখন শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বড় হাসপাতালগুলোতে টিকা দেয়া হতো। এই পরিস্থিতিকে উন্নত করতে পরবর্তী ৫ বছরে টিকাদান কর্মসূচির ব্যাপক সম্প্রসারণ এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ শুরু করা হয়।

১৯৯০ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সময়মতো টিকা না দেওয়ার কারণগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সিডিসি, সিভিপি/পাথ, এবং ইউএসএআইডি যৌথভাবে একটি উদ্যোগ শুরু করে – যা “রিচ এভরি ডিসট্রিক্ট” বা RED কৌশল নামে পরিচিত। ২০০৩ সালে সরকার টিকাদান কর্মসূচীতে হেপাটাইটিস-বি টিকা যোগ করে এবং এডি সিরিঞ্জ চালু করে। ২০০৯ সালে হাম-রুবেলার (MR) টিকা এবং শিশুর ১৫ মাস বয়সে MR ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেশব্যাপী Hib পেন্টাভ্যালেন্ট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং ২০১২ সাল থেকে ৯ মাস বয়সে হামের টিকা দেওয়া শুরু হয়। ২০১৫ সালে নিউমোকোকাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (PCV) এবং IPV ভ্যাকসিন যোগ করা হয়েছিল। এছাড়াও, ২০১৭ সাল থেকে সারা দেশে আংশিকভাবে আইপিভি টিকা যোগ করা হয়েছে।

২০১৬ সালের জরিপ অনুসারে, ১ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত শিশুদের হার ছিল ৮২.৩ শতাংশ। তবে বিসিজি টিকা দেওয়ার হার ছিল ৯৯.৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে ইপিআই ৮৫ শতাংশ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, পোলিও, হাম, রুবেলা, হিমোফিলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, হেপাটাইটিস বি এবং নিউমোনিয়ার মতো ১০টি মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রুটিন ইমিউনাইজেশন সেন্টার, স্থায়ী টিকা কেন্দ্রে শিশুদের এইসকল টিকা দেওয়া হয়। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইপিআই কর্মসূচির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকরা টিকা বঞ্চিত শিশুদের টিকা দেওয়ার আওতায় আনার জন্য নিয়মিত বিরতিতে সারাবছরই বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বিভিন্ন কারখানা, হাসপাতালে ভর্তি শিশু, এবং জেলখানা, নিষিদ্ধ পল্লী, শোধনাগার, বস্তিতে মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের খোঁজ করে এবং টিকা দেয়। 

শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই সাইটটি স্প্যাম কমাতে Akismet ব্যবহার করে। আপনার মন্তব্য কীভাবে প্রক্রিয়া করা হয় তা জানুন