গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ৩১ মে তার প্রথম আন্তঃদেশীয় “জিরো ডোজ লার্নিং হাব এক্সচেঞ্জ (ZDLH-X)” সম্মেলনের আয়োজন করেছে। টিকাদানের বিস্তারকে উন্নত করার জন্য শূন্য-ডোজ শিশুদের সনাক্তকরণ এবং তাদের কাছে টিকা পৌঁছানোর এই বিশ্বব্যাপী ওয়েবিনার একটি তাত্ক্ষণিক সাফল্য হয়ে উঠেছে।

প্রধানত মাঠপর্যায়ের টিকাদান কর্মীরা ছাড়াও ৮৪টি দেশ থেকে প্রায় দুই হাজার অংশগ্রহণকারী এতে যোগদান করেছেন, যাদের মধ্যে সকলেই তাদের অভিজ্ঞতা শুনতে, শিখতে এবং শেয়ার করতে আগ্রহী ছিল। জিরো ডোজ ছিল তাদের কমন গ্রাউন্ড বা মূল আলোচ্য বিষয়। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক সেশনে বাংলাদেশ এবং মালি শূন্য-ডোজ শিশুদের সনাক্তকরণ এবং তাদের কাছে টিকা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছে এবং বাধাগুলি অতিক্রম করার জন্য তারা যে কৌশলগুলি তৈরি করেছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য কেস স্টাডি উপস্থাপন করে।

‘গ্যাভি’ নাইজেরিয়া এবং উগান্ডার সাথে প্রথম কান্ট্রি লার্নিং হাব (সিএলএইচ) স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ও মালিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যদিও দেশগুলি ভিন্ন ভিন্ন টিকাদান পদ্ধতিতে কাজ করে, কিন্তু তারা সকলেই ছোট বা বড় সংখ্যায় টিকাবিহীন ও স্বল্প টিকাপ্রাপ্ত শিশুদের সনাক্তের মাধ্যমে টিকাদানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে । “কান্ট্রি লার্নিং হাব বা CLH” প্রকল্প এমন একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম যা বঞ্চিত সম্প্রদায়গুলিকে চিহ্নিত করার জন্য ডেটা অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করতে, কোন পদক্ষেপগুলি কাজ করে বা কাজ করে না তা খুঁজে বের করতে এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে ও তা থেকে জ্ঞান অর্জন করতে কাজ করছে। ZDLH-X ওয়েবিনার একটি বৈশ্বিক জ্ঞান বিনিময় সম্মেলন, যা CLH কে একটি আন্তঃদেশীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

মোঃ সারওয়ার আলম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র একজন সারভেইল্যান্স অফিসার, যিনি দক্ষিণ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বাদ পড়া সম্প্রদায়গুলোকে চিহ্নিত করেছেন এভাবে- “বস্তির বাসিন্দা, জেলে, সর্প কর্মী, গার্মেন্টস শ্রমিক, আদিবাসী সম্প্রদায়, বিহারী এবং রোহিঙ্গা অভিবাসী।’ এই লোকেরা শহরের সীমানার মধ্যে টিকা কেন্দ্রের কাছাকাছি বাস করে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের কাছে টিকার সুবিধা পৌঁছানো এখনও কঠিন। ২০১৯ সালে হামের প্রাদুর্ভাব এই সমস্যাটির ইঙ্গিত দেয়।

মাঠকর্মীরা দেখেছেন অনেক শিশুকে টিকা দেওয়া হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পার্শ্ববর্তী প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকা থেকে মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছে। মোঃ সারওয়ার আলম উল্লেখ করেন, ‘আদিবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, যা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবধান তৈরি করে।’ তবে ভাষাই একমাত্র বাধা নয়, একজন সহকর্মী অংশগ্রহণকারীর দ্বারা অনুসন্ধানের সময় তিনি ব্যাপারটা স্পষ্ট করেছিলেন। বাদ পড়া সম্প্রদায়ের কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়াই মাইক্রোপ্ল্যানিং করা একটি সাধারণ অনুশীলনে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সেটা এখন বদলে গেছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন স্থানীয় লোকালয়গুলোতে যান, সেখানকার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সাথে পরামর্শ করেন এবং সর্বোত্তম কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। র‍্যাপিড কনভেনিয়েন্স মনিটরিং ডেটাও দেখায় যে এই পদ্ধতি কাজ করে: এখন আর টিকাহীন শিশু নেই এবং হামের প্রাদুর্ভাব নেই।

মালির ফ্রন্টলাইন অনুশীলনকারীরা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, যেখানে যুদ্ধজনিত নিরাপত্তা সমস্যাগুলির কারণে টিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ। Fusseiny Dembele এবং তার সহকর্মীরা সফলভাবে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করে একটি সপ্তাহব্যাপী টিকাদান ক্যাম্পেইন করেছেন যেখানে তারা সম্প্রদায়ের নেতা, মহিলা গোষ্ঠী এবং ক্যাম্পেইন সংগঠকদের সহায়তায় একটি টিকা দেওয়ার সাইট স্থাপন করেছেন। এর প্রস্তুতি নিতে অনেক সময় লাগলেও দিনশেষে তা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

অংশগ্রহণকারীরা ZDLH-এক্সচেঞ্জে উৎসাহের সাথে সাড়া দেয়। যদিও সমস্ত পরিকল্পিত কেস স্টাডি উপস্থাপন করার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল না, তাও সবাই যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

ZDLH-X ওয়েবিনার রেকর্ড করা হয়েছে এবং তা এখানে দেখা যাবে।

 

শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই সাইটটি স্প্যাম কমাতে Akismet ব্যবহার করে। আপনার মন্তব্য কীভাবে প্রক্রিয়া করা হয় তা জানুন