জিরো ডোজ লার্নিং হাব (জেডডিএলএইচ) চালু করার মাধ্যমে নাইজেরিয়া তার তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও উন্নতি রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ন্যাশনাল প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এনপিএইচসিডিএ)-র তত্ত্বাবধানে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম এখনও কোনও মানসম্মত টিকা পায়নি এমন বিপুল সংখ্যক শিশুদের চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে সহায়তা করার জন্য নিবেদিত।
এনপিএইচসিডি-র নির্বাহী পরিচালক ডা: ফয়সাল শুয়াইব বলেন, এই “জিরো ডোজ” শিশু, তাদের মোট সংখ্যা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য তারা যে জনগোষ্ঠীগুলোতে থাকে সেখানে পৌঁছানোর সুষ্ঠ কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে জেডডিএলএইচের গুরুত্ব অনেক। আফ্রিকান ফিল্ড এপিডেমিওলজি নেটওয়ার্ক (এএফইএনইটি) ও আফ্রিকা হেলথ বাজেট নেটওয়ার্ক (এএইচবিএন) যৌথ ভাবে জেডডিএলএইচ বাস্তবায়ন করছে, যেখানে এনপিএইচসিডি-র মাধ্যমে সহায়তা করছে গাভি।
টিকাদান কভারেজ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো পাওয়ার পরিবেশ উন্নত করার জন্য নাইজেরিয়ার যে প্রতিশ্রুতি তা এই উদ্যোগে স্পষ্ট। ডা: শুয়াইব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কোভিড-১৯-র জন্য টিকাদান কভারেজ বৃদ্ধি, নিয়মিত টিকাদান এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে জেডডিএলএইচ এর যাত্রা শুরু হয়েছিল নাইজেরিয়ায় রুটিন টিকাদান সম্পর্কিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে। ২০১৬/২০১৭ সালে এমআইসিএস/এনআইসিএস রিপোর্টে উদ্বেগজনক ফলাফল উঠে আসে। যেখানে দেখা যায় কেবল ৩৩ শতাংশ শিশু পেন্টা ৩ টিকা পেয়েছে। এরই প্রতিক্রিয়ায়, সরকার জাতীয় জরুরি রুটিন টিকাদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনইআরআইসিসি) প্রতিষ্ঠা করে।
এনইআরআইসিসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সারা দেশে টিকাদান কভারেজ এর হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালের এনআইসিএস রিপোর্টে দেখা যায় পেন্টা ৩ টিকার কভারেজ ৫৭ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে ডাঃ শুয়াইব বলেন, সরকার এখনও তার কাঙ্ক্ষিত টিকাদান কভারেজ এর লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
কোভিড-১৯ মহামারী নিয়মিত টিকাদান প্রচেষ্টার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। ফলে অর্জিত হয় না কভারেজের হার। তবে সরকার তার টিকাদান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার নতুন সংকল্প এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির দ্বারা এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসেছে।
জিরো ডোজ লার্নিং হাবের সূচনা নাইজেরিয়ার শিশুদের জন্য যেন আশার বাতিঘর। এই পদক্ষেপ দেশের প্রতিটি শিশু এবং তারা যেন টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগের ঝুঁকিতে না পড়ে তা নিশ্চিতে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বহিঃপ্রকাশ। এক্ষেত্রে লক্ষ্য পরিষ্কার: নাইজেরিয়ায় জিরো-ডোজ শিশুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে টিকাদান কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের সক্ষম করে তোলা।
এএফইনেট-এর আঞ্চলিক কারিগরি সমন্বয়কারী ড: প্যাট্রিক এনগুকু বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক সংখ্যক জিরো-ডোজ শিশুদের দেশ হিসাবে নাইজেরিয়ার অবস্থান তুলে ধরেন। জেডডিএলএইচ একটি অভিনব পদ্ধতি যা, টিকাদান নীতি এবং প্রোগ্রামিং এর উন্নয়নে গবেষণা ও প্রমাণের ব্যবহারকে এগিয়ে নিতে কাজ করে।
হাবটি দুটি পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে। এক্ষেত্রে বাউচি, বোর্নো, কানো এবং সোকোটো সহ অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা রাজ্যগুলোর সুরক্ষা এবং আইডিপি ক্যাম্পের উপস্থিতি সহ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হবে।
নাইজেরিয়ায় ইউনিসেফের কান্ট্রি প্রতিনিধি চিফ অব হেলথ ড. এডওয়ার্ডো সেলাদেস-ও দেশটির টিকাদান কভারেজ এবং সমতা উন্নয়নে জিরো ডোজ লার্নিং হাবের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
নাইজেরিয়া তার শিশুদের টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে রক্ষা করার যে প্রচেষ্টা, জিরো ডোজ লার্নিং হাবের সূচনা তারই একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সমাজের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্যদের জন্য সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এটি প্রতিনিধিত্ব করে। অব্যাহত সহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে নাইজেরিয়া টিকার মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে সুরক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।