২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ তার নীতিগত এজেন্ডায় স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশের সকল নাগরিকের জন্য সুলভ ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরকার বিভিন্ন উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এই অগ্রযাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হল জেলা স্বাস্থ্য তথ্য সফটওয়্যার -২ (ডিএইচআইএস ২) এর প্রবর্তন। এটি একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যত, বিশেষত শিশু টিকাদানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ধারণা দিতে পারে।
ডিএইচআইএস ২ একটি বিস্তৃত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যা স্বাস্থ্য ডেটা সংগ্রহ, পরিচালনা এবং বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্তরে ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রমাণ-ভিত্তিক পরিকল্পনার জন্য একটি শক্তিশালী উপায় হিসাবে কাজ করে। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হওয়া ডিএইচআইএস ২ বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বৃহত্তম প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে এবং ৯০% এরও বেশি সরকার তাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এটি ব্যবহার করে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ডিএইচআইএস২ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তৃণমূল পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে তৃতীয় স্তরের সরকারি হাসপাতাল পর্যন্ত রুটিন ডেটা সংগ্রহ এবং তথ্য একত্রিত করার মাধ্যমে ডিএইচআইএস ২ একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর রিয়েল-টাইম ডেটা রিপোর্টিং ক্ষমতা স্বাস্থ্যকর্মীদের সাচিবিক দায়িত্ব হ্রাস করে, প্রমাণ-ভিত্তিক পরিকল্পনা সহজতর করে এবং সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। তদুপরি, ডিএইচআইএস ২ একাধিক বিভাগের পারস্পরিক সহযোগিতাকে উত্সাহিত করে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকল্পনাকে উন্নত করে এবং স্বাস্থ্য পরিচালকদের অধিকতর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে সহজতর করে।
বাংলাদেশে ডিএইচআইএস২ এর প্রধান সুবিধাভোগী হচ্ছে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা খাত, যাদেরকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন এবং বাজেট বরাদ্দের জন্য ডেটা অ্যাক্সেস প্রদান করা হয়েছে। ২০১০ সালে এটি চালুর পর থেকে, ডিএইচআইএস ২ ধীরে ধীরে দেশের ১৪,০০০ এরও বেশি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রজুড়ে তার প্রসার বাড়িয়েছে। তবে একটি বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, এনজিও ও সিটি করপোরেশনের প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ডিএইচআইএস ২-এর উল্লেখযোগ্য অর্জন হচ্ছে শৈশবকালীন টিকাদান পরিষেবাকে উন্নত করা, বিশেষত শহুরে অঞ্চলে। এর রিয়েল-টাইম ডেটা রিপোর্টিং ক্ষমতার সাহায্যে, ডিএইচআইএস ২ স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা টিকা প্রদান, মিস করা ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে এবং তাদের কাছে টিকা পৌঁছাতে সাহায্য করে। রেকর্ডে সংরক্ষিত সেবাগ্রহীতাদের যোগাযোগের তথ্য দ্বারা সহজতর এই পদ্ধতিটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের রোগীদের ক্লিনিকগুলিতে যেতে এবং প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণকরতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। পূর্বের খাতায় লেখার থেকে ডিএইচআইএস ২-এ রূপান্তর এই প্রক্রিয়াটিকে সুশৃঙ্খল করেছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতিটি গর্ভবতী মা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুকে অনলাইনে নিবন্ধিত করা হয়, ফলে সাপ্তাহিক পর্যবেক্ষণ এবং সময়মত টিকা গ্রহণের সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতাও নিশ্চিত হয়।
এর তথ্যেভান্ডারের মধ্যে রয়েছে টিকা নেওয়া শিশুদের সংখ্যা, ব্যবহৃত শিশি ও সিরিঞ্জ এর হিসাব এবং অন্যান্য লজিস্টিক তথ্য। উপরন্তু, ডিএইচআইএস ২ এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের তদারকির চেকলিস্টগুলিকে একটি ডিজিটাল ফর্ম্যাটে রূপান্তরের পাশাপাশি জিওলোকেশন ও গুণগতমান নিয়ন্ত্রণসহ রিয়েল-টাইম ডেটা আপলোডের সুবিধা আছে। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) এবং প্রথম সারির সুপারভাইজাররা টিকাদান প্রক্রিয়া, কর্মীদের উপস্থিতি, সেশন অর্গানাইজেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এইএফআই ব্যবস্থাপনা, কোল্ড চেইন রক্ষণাবেক্ষণ এবং লজিস্টিকস পর্যবেক্ষণ করতে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করেন। এটি জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা এবং উপ-জেলা পর্যায়ে কার্যকর মনিটরিং এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরও কার্যকর করে।.
বাংলাদেশে ডিএইচআইএস২ এর প্রবর্তন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা বিপ্লবের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর বিস্তৃত ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতার পাশাপাশি, ডিএইচআইএস ২ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক এবং নীতিনির্ধারকদের প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে, দক্ষতার সাথে সম্পদ বরাদ্দ করতে এবং মূল স্বাস্থ্য সূচকগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা দেয়। শিশুদের টিকাদান পরিষেবাগুলিতে মনোনিবেশ করে, ডিএইচআইএস ২ ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, বিশেষত শহুরে অঞ্চলে, যা ইতোমধ্যে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও টিকাদানের হার অর্জনে সরকারের লক্ষ্যগুলোকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে অবশ্যই ডিএইচআইএস২ এর পরিধি সম্প্রসারণ করতে হবে। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোকেও এতে প্রবেশের সুবিধা দিতে হবে।