সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে, বাংলাদেশ ১৯৭৯ সাল থেকে ০-২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য টিকা প্রদানের কভারেজ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ইপিআই-এর লক্ষ্য বাংলাদেশের সকল শিশুকে উচ্চ-মানের টিকাদান পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) দ্বারা সৃষ্ট অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করা। বাংলাদেশ সফলভাবে নির্দিষ্ট আউটরিচ সাইটের মাধ্যমে দশটি ভিপিডির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে, কিছু রোগ এখন নির্মূল হয়েছে, যেমন পোলিও। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সার্টিফিকেশন কমিটি দ্বারা বাংলাদেশকে একটি পোলিও মুক্ত দেশ ঘোষণা করা হয় [1]।
কোভিড-১৯ মহামারী বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে, কারণ মহামারীর শুরুর মাসগুলিতে রুটিন টিকাদান পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল এবং ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রায় ২৮৪,০০০ টি শিশু নিয়মিত টিকাদান থেকে বঞ্চিত হয়েছিল [3]। বাংলাদেশ ২০২০ সালের জুনে টিকাদান পরিষেবা পুনরায় শুরু করে এবং নিয়মিত টিকা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ডিসেম্বর ২০২০ থেকে জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত, বাংলাদেশ একটি গণ হাম এবং রুবেলা টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে, যেখানে ৩.৬ মিলিয়ন শিশুকে টিকা প্রদান করা হয় এবং কোভিড-১৯ দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা হয়। মূল কর্মসূচিতে আরও নন-ইপিআই ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু পিতামাতাদের নেতিবাচক মনোভাব, পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব এবং মহামারীর ভীতি টিকাদান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে, যার ফলে শূন্য-ডোজ এবং প্রথম-ডোজ টিকা দেওয়া শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। [৪]।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার নতুন করে ৪৪,০০০ মেডিকেল কর্মী মোতায়েন করেছে, ৭,৩৪৪ টি টিকাদান দলকে প্রশিক্ষিত করেছে এবং ১০০০ টিরও বেশি টিকাদান সাইট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান এবং ভ্যাকসিন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্র্যাকিং [২] এর মতো শক্তিশালী নীতিগুলিও বাস্তবায়ন করেছে এবং সার্বিক টিকা প্রচারের সাফল্য নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউনিসেফ (UNICEF), গ্যাভি, দ্য ভ্যাকসিন এলায়েন্স (GAVI), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ADB) এবং আইসিডিডিআর,বি (icddr,b)-এর মতো সংস্থাগুলির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে। এসকল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ইপিআই প্রোগ্রামের অধীনে নিয়মিত ডিটিপি৩ টিকাদান অব্যাহত রয়েছে এবং জরুরী কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা হয়েছে [7]।
সফল ইমিউনাইজেশন কভারেজ অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল ভ্যাকসিন এবং সম্পদের প্রাপ্তিতে সাম্যতার অভাব [6]। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিস (DGHS) এর ২০২০ হাম-রুবেলা বুলেটিন অনুসারে, ৫৮২৪ টি সন্দেহজনক হামের মধ্যে ০-১১ মাস বয়সী ১৩৭ টি শিশুকে, ১২-৫৯ মাস বয়সী ২৫৬টি শিশুকে, ৫-৯ বছর বয়সী ২৪৯টি শিশুকে, ১০-১৪ বছর বয়সী ৪২৩টি শিশুকে, ১৫-১৯ বছর বয়সী ২১০টি শিশুকে এবং ২০ বছর বা তার বেশি বয়সী ২৭৬টি শিশুকে মাত্র এক ডোজ টিকা দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও ৯-১১ মাস বয়সী ৩৩৫টি শিশু, ১ বছরের বেশি কিন্তু ২ বছরের কম বয়সী ১৭৩টি শিশু, ২-৪ বছর বয়সী ২৮১টি শিশু, ৫-৯ বছর বয়সী ৩৯১টি শিশু, ১০-১৪ বছর বয়সী ২০০টি শিশু এবং ১৫ বছরের কম বয়সী ৭৯৩টি শিশু কোনো টিকাই পাননি [5]।
মহামারী দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও টিকাদান কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য, ভিপিডি থেকে অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করার লক্ষ্য অর্জনে দেশটির নিরন্তর প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য প্রদান করে। টিকাদান কর্মসূচীর অংশীদারদের দ্বারা সমর্থিত সরকারের প্রচেষ্টাগুলো টিকাদানের বাধাগুলি অতিক্রম করতে এবং বাংলাদেশের শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সরকার বাংলাদেশের সকল শিশুকে টিকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ভ্যাকসিনে ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্যতা অর্জন এবং ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে কাজ চালিয়ে যাবে।