ডাঃ রিয়াদ মাহমুদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচীর প্রধান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নিয়মিতই ঢাকায় ইপিআই সদর দপ্তরে যান। ইউনিসেফ এবং ইপিআই-এর মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, “ইউনিসেফ ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু থেকে ইপিআই কর্মসূচীর সাথে যুক্ত ছিল এবং আমরা ভবিষ্যতেও তা চালিয়ে যাব।”
ডাঃ রিয়াদ মাহমুদ ইপিআই সদর দফতরের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ইপিআই উপ-ব্যবস্থাপক এবং কয়েকজন সহকর্মীদের সাথে কথাবার্তা বলছেন।
যদিও ডাঃ রিয়াদ গত বছরেই ইউনিসেফের টিম লিড (ইমিউনাইজেশন) হিসাবে যোগদান করেছেন, তিনি পূর্বে ইউনিসেফ-এ মাতৃ ও কিশোর স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ এবং ইউএসএআইডি-এর নীতি ও প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা থাকার সুবাদে আগে থেকেই অনেক ইপিআই কর্মীকে চেনেন। তিনি জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর সহ একজন প্রশিক্ষিত সাধারণ স্বাস্থ্য অনুশীলনকারী, যার চব্বিশ বছরেরও বেশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আছে।
ইপিআই কার্যালয়কে তাঁর বাড়ির মতোই পরিচিত মনে করেন। সেখানকার গুদামে, করিডোর এবং সিঁড়িতে সিরিঞ্জে ভরা শক্ত কাগজের বাক্সগুলি একটি জরুরী অনুভূতির সৃষ্টি করে।
সারিবদ্ধ সিরিঞ্জ বাক্সগুলি জরায়ুর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মেয়ে এবং যুবতী মহিলাদের রক্ষা করার জন্য প্রথম HVP টিকা প্রচারের প্রস্তুতির অংশ। “আমরা এইমাত্র প্রচারণার চূড়ান্ত পরিকল্পনা শেষ করেছি,” ডঃ রিয়াদ ব্যাখ্যা করেন। তিনি নিশ্চিত যে HVP প্রচারাভিযান সফল হবে। ইউনিসেফের স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন রিপোর্ট ২০২৩ অনুসারে কোভিড-১৯ মহামারীর পরে টিকা সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী আস্থা হ্রাস পেলেও, বাংলাদেশে রুটিন টিকাদানের কভারেজের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। “আমাদের জনগণের পূর্ণ আস্থা আছে যে ভ্যাকসিন তাদের এবং তাদের শিশুদের রোগের বিরুদ্ধে রক্ষা করবে।”
ডঃ রিয়াদ বাংলাদেশে টিকাদানের কাজে গর্বিত। ইপিআই অফিসের একটি কক্ষে বসে ইপিআই এবং ইউনিসেফের সহকর্মীদের সাথে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর মূল অংশীদার হিসাবে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স-এর দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেন। ডব্লিউএইচও যেখানে রোগের নজরদারির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, ইউনিসেফ সেখানে টিকাদান প্রক্রিয়ার অন্যান্য দিকগুলির সাথে জড়িত, যেমন নিয়মিত ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং সরবরাহ, কৌশলগত পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণ। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন লকডাউনে টিকাদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। “কিন্তু আমরা কাজ বন্ধ রাখিনি,” ডঃ রিয়াদ জোর দিয়ে বলেন। সহকর্মীদের প্রতি তার প্রশংসার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কোভিডের সময় কীভাবে ইমিউনাইজেশন পরিচালনা করতে হয় তা লোকেদের বুঝাতে গাইডলাইন সেট আপ করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছি। আমরা ৩৬৫ মিলিয়ন ডোজ টিকা সরবরাহ করেছি, ১০০% এরও বেশি কভারেজ অর্জন করেছি, এবং যেখানে টিকাদানের নিয়মিত বয়সসীমা ২ বছর পর্যন্ত সেখানে আমরা ৩ বছর বয়সী শিশুদেরও টিকার আওতায় নিয়েছি।”
ডাঃ রিয়াদ বলেছেন, “কোভিড অ্যাকশন অ্যাপ্রোচ” ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য এবং টিকাদান কর্মসূচীতে অংশীদারদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার একটি টেকসই উপায় দেখিয়েছে। উপ-জেলা পর্যায়ে মাইক্রোপ্ল্যানিং।” ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএইচও উভয়ই স্বল্প-সক্রীয় টিকাদানকারী জেলা, উপ-জেলা পর্যায়ে এবং সিটি কর্পোরেশনগুলিতে মাইক্রোপ্ল্যানিং প্রবর্তন শুরু করেছে। “ইকুইটেবল ইমপ্যাক্ট সেনসিটিভ টুল বা ইকুইস্ট টুল” – এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিটি শূন্য-ডোজ শিশু এবং বঞ্চিত সম্প্রদায়ের উপর নজরদারির সাথে সাথে টিকার সাম্যতা নিশ্চিতেও কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
ডাঃ রিয়াদের মতে, “আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল শূন্য-ডোজ শিশু এবং কম টিকাপ্রাপ্তদের কাছে টিকা পৌঁছানো।” বাংলাদেশের ১% বা প্রায় ৩০,০০০ জিরো-ডোজ শিশু আছে, যা সামগ্রিক টিকাদান কর্মসূচির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে স্বল্প-টিকাপ্রাপ্ত শিশু, টিকা বঞ্চিত এবং অকার্যকর-ডোজ প্রাপ্ত শিশুদের সংখ্যাও একেবারে কম না। তিনি মনে করেন, “সঠিক সময়ে এসকল শিশুদের নিয়মিত টিকা গ্রহণের আওতায় আনার বিষয়টিও একই অগ্রাধিকারের সাথে জোর দেওয়া উচিত।”
“ই-ট্র্যাকিং একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে,” ডঃ রিয়াদ মনে করেন। ইউনিসেফ ই-ট্র্যাকিংয়ের সাথে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে, যাতে শিশুরা ডিজিটালভাবে নিবন্ধিত হবে এবং স্বল্প সময়েই তাদের অবস্থান সনাক্ত করা যাবে। এই পাইলট প্রকল্পের সাথে জড়িত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দ্বারা ই-ট্র্যাকিং সিস্টেমের একটি সাম্প্রতিক প্রদর্শনের ফলে প্রকল্পটি প্রসারিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ডঃ রিয়াদের জন্য এই উদ্ভাবনী কৌশলগুলি আশাবাদ এবং আত্মবিশ্বাসের উৎস। তাঁর এখনও অনেক কাজ বাকি আছে, কিন্তু তাও প্রতিনিয়তই তিনি সবার জন্য টিকা পৌঁছানোয় এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে সংকল্পবদ্ধ।