ইপিআই-এর মাধ্যমে টিকাদানে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য তার নাগরিকদের জন্য উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকারের প্রমাণ। দেশটি ২০০৯ এবং ২০১২ সালে “GAVI বেস্ট পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড” সহ অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছে; এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে মর্যাদাপূর্ণ “ভ্যাকসিন হিরো” পুরস্কার গ্রহণ করেন[২]। টিকাদানের মাধ্যমে, বাংলাদেশ ১৯৮৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ মিলিয়ন শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করেছে এবং এখনও প্রতি বছর প্রায় ২০০,০০০ শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করে চলেছে। এই সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারণগুলির মধ্যে একটি হল সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই), যা ১৯৭৯ সাল থেকে চালু রয়েছে এবং যার ফলে টিকা দেওয়ার হার ১৯৮৮ সালে ১৬% থেকে ২০১৯ সালে ৯০%-এর বেশি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে [3]।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ইপিআই প্রোগ্রাম চালু করে যাতে সকল শিশুকে উচ্চমানের টিকাদান পরিষেবা প্রদান করে ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) থেকে অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার কমানো যায়। প্রোগ্রামটি ছয়টি টিকা দিয়ে শুরু হয়েছিল, এবং সরকারের ব্যাপক সহায়তায়, এটি ১৯৯০ সালের মধ্যে ৪৭৬টি উপজেলা, ৯২টি প্রধান পৌরসভা এবং ৬টি সিটি কর্পোরেশনে তার কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে [4]। এই সময়ে, প্রোগ্রামটি উচ্চ-মানের ভ্যাকসিন কভারেজ নিশ্চিত করার জন্য উন্নত কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা সহ সারা দেশে ১৩৪,০০০টিরও বেশি আউটরিচ সেন্টার স্থাপন করেছে [1]। পরবর্তী বছরগুলিতে, সরকার নতুন এবং উন্নত ভ্যাকসিন প্রবর্তন করে, যেমন TT5 ডোজ, হামের সমন্বিত ভ্যাকসিন, নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন এবং ইনজেকশন প্রদানযোগ্য পোলিও ভ্যাকসিন। এই নিরন্তর প্রচেষ্টার সাফল্য দেশ থেকে পোলিও নির্মূলে প্রতিফলিত হয়েছিল এবং ২০১৪ সালে ডব্লিউএইচও কর্তৃক বাংলাদেশকে একটি পোলিওমুক্ত দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল [5]।
এই সাফল্য সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখন ভিপিডি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। টিকা দেওয়ার জন্য উচ্চ কভারেজ বজায় রাখা একটি নিরন্তর প্রচেষ্টা, কারণ ভ্যাকসিন উৎপাদনের মাত্রা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে সমন্বিত হওয়া জরুরী। টিকাদানের বৈষম্যও একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের উচ্চহারের কারণে জিরো-ডোজ শিশু বা পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ মিস করা শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে পুনরায় এসব রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে [6]। তাই গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য টিকাদান সহায়তা বাড়িয়েছে এবং সরকারকে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য অধিক সহায়তার দিকে নজর দিচ্ছে [7]। উপরন্তু, সরকার স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নত ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবন সহ এই সমস্যাগুলি মোকাবেলায় অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশে টিকাদানের সাফল্য শুধু লক্ষাধিক মানুষের জীবন রক্ষা করেনি বরং অন্যান্য দেশের জন্যও অনুপ্রেরণার কাজ করেছে। ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ নির্মূলে বাংলাদেশের অটুট প্রতিশ্রুতি এবং আর্থ-সামাজিক পটভূমি নির্বিশেষে সমস্ত শিশুর কাছে টিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসার দাবিদার। ইপিআই অন্যান্য দেশগুলির জন্য একটি মডেল প্রোগ্রাম হয়ে উঠেছে যারা তাদের টিকা দেওয়ার কভারেজ উন্নত করতে এবং ভিপিডি কমাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ রয়ে গেলেও, সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের মতো সংস্থার সমর্থন নিয়ে ভিপিডি-এর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতেও নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে থাকবে।